নাচায় পুতুল যথা
– সুনির্মল বসু
জীবন কাকে কখন কোথায় কোন্ সুদূরে নিয়ে যাবে, জীবন জানে না,
মৃত্যু কাকে কখন কোথায় কোন্ সুদূরে নিয়ে যাবে,
মৃত্যু জানে না,
অথচ জীবন-মৃত্যুর মাঝে দুলছে মানুষের জীবন,
সাপ লুডোর মতো কখন যে উত্থান, কখন যে পতন, কারো কাছে এই উত্তর জানা নেই,
যে ছেলেটা শ্রেণীতে শেষ বেঞ্চে বসে অংক পারতো না বলে, প্রতিদিন স্যারের কাছে বকা খেত, সে আজ প্ল্যানিং কমিশনের বড় কর্তা,
যে ছেলেটা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে মাঝ পথে পড়া ছেড়ে দিয়েছিল, সে আজ নামকরা লেখক,
যে ছেলেটা কবিতা লিখে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে পুরস্কার পেয়েছিল, ভালো লেখার জন্য যার নামডাক ছিল, সে এখন কারখানার মজুর,
জীবন সম্পর্কে শেষ কথা বলা বড় শক্ত,
মানুষ ভাবে, আমি এই পথে যাবো, ঈশ্বর উল্টো পথে নিয়ে যান,
জীবনের যাত্রাপথ কাকে যে কোথায় কখন নিয়ে যায়, তা আগে থেকে আন্দাজ করা যায় না,
তবু মানুষ জন্ম যাযাবর, মানুষ ভ্রাম্যমান দার্শনিক,
আর চলাই জীবনের অন্য নাম,
তাই জন্ম পথিক মানুষ চলতেই থাকে,
এই চলার শেষ হলে, জীবন অস্তগামী সূর্যের মতো দিগন্ত হেলে পড়ে, কেউ একজন এসে তখন কানের কাছে বলে, রইল রে তোর সাধের দোকানদারি,
বেঁচে থাকার সময় টুকু অজস্র স্মৃতির মালা হয়ে যায়, এক জীবনে মানুষের এর চেয়ে চাইবার আর বেশি কি, জীবনের নাগরদোলায় এভাবেই প্রতিদিন জীবন ও মৃত্যু পাশাপাশি দক্ষ যাদুকরের মতো জীবন-মৃত্যুর খেলা দেখায়,
আকাশ আলো নদী বন্দর পাকা সড়ক থেকে ধানক্ষেত একই রকম থাকে,
উদাসী বাতাস জীবনের এই গভীর সত্য জেনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে।